সেই জলিলসহ তিন মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি | তারিখ: ০৯-০২-২০১১
আবদুল জলিল
অবশেষে পুলিশ তৎপর হয়েছে এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ (উত্তর) ইউনিয়নের কাপাইকাপ মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল জলিলকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার করেছে মাদ্রাসার আরও দুই শিক্ষককেও। তাঁদের একজন গণিত বিষয়ের শিক্ষক আবুল খায়ের এবং অন্যজন কম্পিউটার শিক্ষক কাউছার আহম্মেদ।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ, তার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া এবং গ্রাম্য সালিসের মতামত উপেক্ষা করে কথিত বিয়ের অভিযোগে মামলা করেছিলেন শিশুর বাবা। গত ১৯ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-১ আরজি দেওয়ার পর ২৪ জানুয়ারি তা হাজীগঞ্জ থানায় আসে। পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করে ২ ফেব্রুয়ারি। মামলায় শিক্ষক আবদুল জলিলকে একমাত্র আসামি করা হয়। কিন্তু এত দিনেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গতকাল প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘কী যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে শিশুটিকে’ শিরোনামে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
থানায় শিক্ষক জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। তারও সম্মতি ছিল। ঘটনা সমাধানের জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হাই বিয়ে পড়িয়েছেন।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার একটি সুষ্ঠু সুরাহার প্রস্তাব পাঠানো হয় জলিলের কাছে। এরপর স্ত্রীসহ কয়েকজনকে নিয়ে জলিল হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার এএসপি সার্কেলের কার্যালয়ের সামনে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিয়ে পড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকায় মাদ্রাসার গণিত বিষয়ের শিক্ষক আবুল খায়ের এবং বাচ্চা নষ্ট করার জন্য জলিলের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করায় কম্পিউটার শিক্ষক কাউছার আহম্মেদকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এবং এএসপি সার্কেল আবু তারেক মাদ্রাসায় গিয়ে তাঁদের আটক করেছি। অধ্যক্ষ আবদুল হাই ও গভর্নিং বডির সদস্য আবদুর রব খাঁ পালিয়ে গেছেন।’ রাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এই দুই শিক্ষককেও জলিলের সঙ্গে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহের আয়োজনসহ একাধিক অভিযোগ আনা হবে। আজ তিনজনকে আদালতে হাজির করা হবে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শহীদুল্যাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর থেকে আসামি ধরার জন্য আমার বিশেষ নির্দেশ ছিল।’ এর পরও আসামি গ্রেপ্তার করতে দেরি হলো কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক আগের। আর মামলা হওয়ার পর আসামি তো পালিয়ে বেড়ায়। এ জন্য সময় লেগেছে। স্থানীয় লোকজনও ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় অনেক কারসাজি করেছে বলে জেনেছি।’
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবন ধ্বংসের জন্য জলিলের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। আর যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করছি।’
শিশুটির মামাও কাপাইকাপ মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘জলিল গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি বোধ করছি। তবে মাদ্রাসার অন্য দুই শিক্ষক আটক হওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’
কালচোঁ (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফ উল্যাহ পাটওয়ারী বলেন, ‘মেয়ের পরিবারকে আইনি সুরক্ষাসহ অপরাধীদের কঠোর সাজা হওয়া উচিত।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ৩ আগস্ট প্রাইভেট পড়তে গেলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন আরবি শিক্ষক জলিল। মেয়েটি পরিবারের কাছে তা গোপন করে। কিন্তু শারীরিক সমস্যা শুরু হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় এবং সে অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা যায়। গত ৫ জানুয়ারি ছাত্রীর বাবা কাপাইকাপ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হাইকে ঘটনাটি জানান। অধ্যক্ষ ৬ জানুয়ারি মাদ্রাসার শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে দুই লাখ টাকা কাবিনে জলিলের সঙ্গে শিশুটির বিয়ের সিদ্ধান্ত দেন। জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী শিশুটির বয়স ১১ বছর তিন মাস।
শিক্ষক জলিলের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পেকদা গ্রামে। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে আছে। বড় ছেলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। মামলার এজাহারে জলিলের বয়স লেখা হয়েছে ৬০ বছর। তবে তিনি গতকাল থানায় দাবি করেছেন, তাঁর বয়স ৫০ বছর।